গ্রীষ্মের এক সকাল। শহরের কোলাহলময় জীবন থেকে কিছুটা মুক্তি পেতে নকুল আর সহদেব বসে আছে শহরের এক জনপ্রিয় ক্যাফেতে। ক্যাফের জানালা দিয়ে দেখা যায়, রাস্তার ব্যস্ততা আর মানুষের ছুটে চলা।

নকুল হাতে এক কাপ গরম কফি নিয়ে সহদেবের দিকে তাকায়। তাদের দুজনের মধ্যেই কোনো কথা নেই, শুধু ক্লান্তি আর একঘেয়েমি।

নকুল:(কফিতে চুমুক দিয়ে) সহদেব, চল না এই সপ্তাহের শেষে কোথাও ঘুরতে যাই। শহরের ভিড় আর কোলাহল থেকে একটু দূরে, যেন কিছুটা স্বস্তি পাই।

সহদেব:(মুচকি হেসে) দারুণ আইডিয়া! কোথায় যাওয়ার পরিকল্পনা করছিস বল? 

(নকুল কিছুক্ষণ চিন্তা করে তারপর চোখ বড় করে বলে ওঠে।)

নকুল:শহরের বাইরে যে গভীর জঙ্গলটা আছে না, সেখানেই চল। শুনেছি, ওখানে অনেক রহস্য লুকিয়ে আছে।

(সহদেব কিছুক্ষণ নীরবে থাকে। তার চোখে কৌতূহলের ঝিলিক দেখা যায়।)

সহদেব:(একটু ভেবে) ঠিক আছে, চল। তবে আমরা প্রস্তুতি নিয়ে যাবো। নিরাপত্তার বিষয়টা মাথায় রাখতে হবে। জঙ্গলে যাওয়া মানে কোনো সহজ কাজ নয়। 

(নকুল উত্তেজিত হয়ে নিজের পরিকল্পনা শেয়ার করে।)

নকুল:হ্যাঁ, ঠিক বলেছিস। আমরা কিছু খাবার, জল, টর্চলাইট, মানচিত্র, কম্পাস আর ক্যামেরা নিয়ে যাব। আর, কিছু প্রয়োজনীয় ওষুধও নিতে হবে।

সহদেব:(মুখে হাসি নিয়ে) পরিকল্পনা তো দারুণ। তবে আমাদের জঙ্গলের গাইড নিয়ে যাওয়া উচিত। ওখানে পথ হারিয়ে গেলে বিপদে পড়তে হবে।

নকুল:(নিশ্চিন্তে) চিন্তা করিস না। আমি আগে একবার গিয়েছিলাম, এবং আমি জানি কোন পথ ধরে যেতে হবে। আর গাইডের প্রয়োজন হলে, ওখানে গিয়ে ঠিক করে নেবো।

সহদেব মাথা নাড়ে এবং নকুলের দিকে তাকায়, যেন মনে মনে সেই অজানা জঙ্গলে হারিয়ে যাওয়ার স্বপ্ন দেখছে।

সহদেব:(সাহসের সাথে) ঠিক আছে, তাহলে এই পরিকল্পনাই রইল। আমাদের অ্যাডভেঞ্চার শুরু করা যাক। 

নকুল:(হাসতে হাসতে) হ্যাঁ, আর এই অ্যাডভেঞ্চার নিশ্চয়ই আমাদের জীবনের অন্যতম সেরা অভিজ্ঞতা হবে।

দুজনেই ক্যাফে থেকে বেরিয়ে যায়, এক অন্যরকম উত্তেজনা আর কৌতূহল নিয়ে। তাদের চোখে মুখে এক অনন্য অনুভূতি, যেন তারা কিছু মহৎ এবং নতুন কিছু আবিষ্কারের পথে পা বাড়াচ্ছে।

দৃশ্য ২: জঙ্গলের প্রবেশপথে

পরের দিন সকালে, সূর্যের আলো ভোরের বাতাসকে আলোকিত করছে। নকুল আর সহদেব ব্যাগ হাতে নিয়ে রওনা দেয় জঙ্গলের দিকে। তারা একটি ট্যাক্সিতে উঠে শহর ছেড়ে চলে যায়। শহর ছাড়িয়ে যাওয়ার সাথে সাথে প্রকৃতির সৌন্দর্য ধীরে ধীরে তাদের চোখের সামনে উন্মোচিত হয়। 

ট্যাক্সি এসে থামে জঙ্গলের প্রবেশপথের সামনে। চারদিকে সবুজের সমারোহ, বড় বড় গাছের সারি, পাখির ডাক, আর হালকা বাতাসে পাতার মর্মর ধ্বনি। সহদেব একটু নীরব থাকে, চারপাশের সৌন্দর্য উপভোগ করতে থাকে।

নকুল:(হাসি মুখে) আরে দেখ, সহদেব, আমরা জঙ্গলের পথে পা রেখেছি। প্রকৃতি যেন আমাদেরকে স্বাগত জানাচ্ছে। এখানে এসে মনটাই শান্ত হয়ে গেছে। 

সহদেব:(চিন্তিত মুখে) হ্যাঁ, পরিবেশটা সত্যিই মনোরম। তবে সাবধানে চলা উচিত। এই জঙ্গল খুবই বিশাল আর একবার যদি পথ হারাই, বেরোনো মুশকিল হবে। 

(নকুল মনে মনে পথের নকশা মনে করে, এবং তার কাছে থাকা মানচিত্র দেখে নেয়। তার চোখে এক অদ্ভুত বিশ্বাসের ঝিলিক দেখা যায়)

নকুল:(আত্মবিশ্বাসের সাথে) চিন্তা করিস না। আমি আমার কম্পাস এনেছি। আমাদের মধ্যে একজনকে তো অগ্রগামী হতেই হবে, তাই না? আর আমরা তো আর সারা জীবন শহরে বসে থাকতে পারব না।

(সহদেব একটু মুচকি হেসে নকুলের দিকে তাকায়। তার মনে হচ্ছে যেন নকুলের এই আত্মবিশ্বাস তাকে আরও সাহসী করে তুলছে) 

সহদেব:(কৌতূহল নিয়ে) ঠিক বলেছিস। আমাদের এগিয়ে যেতে হবে। তবে আমাদের একটা পরিকল্পনা করতে হবে যাতে বিপদ এড়ানো যায়।

(নকুল ব্যাগ থেকে তার কম্পাস বের করে এবং রাস্তা দেখতে থাকে)

নকুল:(দূরে তাকিয়ে) আমরা সোজা পথে যাব। এই পথ ধরে গেলে জঙ্গলের গভীরে পৌঁছানো যাবে। আর আমি নিশ্চিত আমরা কিছু না কিছু রহস্যময় জিনিস খুঁজে পাব।

(দুজনেই একসাথে হাঁটতে শুরু করে। পথে বড় বড় গাছ, পাখিদের কিচিরমিচির, এবং জঙ্গলের নীরবতার মধ্যে দিয়ে তারা ধীরে ধীরে এগিয়ে যায়) 

তারা যখন জঙ্গলের আরও গভীরে প্রবেশ করতে থাকে, তখন অনুভব করতে থাকে যে তারা যেন এক অন্যরকম জগতে প্রবেশ করছে। যেন এই জঙ্গল তাদের নতুন কিছু শিখাবে। 

সহদেব:(অনুভূতির সাথে) নকুল, এ জঙ্গল যেন আমাদের জীবনের এক নতুন অধ্যায়। এখানে এসে যেন সব ক্লান্তি দূর হয়ে গেল।

নকুল:(আবেগে) হ্যাঁ, সহদেব। এখানে এসে মনটা একদম হালকা লাগছে। মনে হচ্ছে আমরা যেন প্রকৃতির কোলে ফিরে এসেছি।

তারা আরও কিছুক্ষণ ধরে হাঁটে এবং পথের সৌন্দর্য উপভোগ করতে থাকে। মাঝে মাঝে তারা পথের পাশে ছোট ছোট পাখিদের কিচিরমিচির শুনে দাঁড়িয়ে যায়। গাছের ফাঁক দিয়ে সূর্যের আলো তাদের পথ দেখায়। 

তাদের মনে হয়, প্রকৃতির এই অজানা জগৎ তাদের আরও কিছু শেখাবে, কিছু রহস্যময় জিনিস তাদের সামনে উপস্থিত হবে। 

এভাবেই তারা জঙ্গলের ভিতর অগ্রসর হতে থাকে, এবং তাদের মনে এক অদ্ভুত উত্তেজনা কাজ করতে থাকে। নকুল এবং সহদেব জানে না যে তাদের সামনে কি অপেক্ষা করছে, কিন্তু তারা বিশ্বাস করে যে এই জঙ্গলের অভিজ্ঞতা তাদের জীবনে এক অনন্য অধ্যায় রচনা করবে। 

উপসংহার :--

অধ্যায় ১ শেষ হয় নকুল এবং সহদেবের জঙ্গলের পথ ধরে হাঁটার সাথে। তারা জঙ্গলের ভিতর দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে অজানা অভিজ্ঞতার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে। প্রকৃতির গভীরে হারিয়ে যাওয়ার কল্পনা তাদের মনে ভর করে আছে।

কিন্তু, একটু পরেই তাদের দুজনের মনে কিছু অস্বাভাবিকতার আভাস পাওয়া যায়। হঠাৎ, পাখির ডাক থেমে যায়, বাতাসে অদ্ভুত শীতলতা দেখা দেয়। নকুলের মনে সন্দেহ জাগে, সহদেবও একটু থমকে যায়। 

সহদেব:(চিন্তিত কণ্ঠে) নকুল, কিছু অদ্ভুত লাগছে না? এমন নীরবতা কেন?

নকুল:(অস্থিরভাবে) হ্যাঁ, আমিও লক্ষ্য করেছি। এই জঙ্গল যেন আচমকা আমাদের চোখে ভিন্নভাবে ধরা পড়ছে।

দুজনেই কিছুটা থেমে দাঁড়ায়, এবং চারপাশে নজর রাখে। নকুল তার কম্পাস আর মানচিত্র পরীক্ষা করে দেখতে চেষ্টা করে তারা ঠিক পথে আছে কি না। সহদেব একটু ভীত সুরে বলে ওঠে,

সহদেব:ফিসফিস করে) মনে হচ্ছে যেন কেউ বা কিছু আমাদের দিকে তাকিয়ে আছে। 

নকুল মাথা ঘুরিয়ে চারপাশে দেখে, কিন্তু কিছু দেখতে পায় না। তবে তার মনেও সন্দেহের ছায়া পড়ে। জঙ্গলের মধ্যে এক অদ্ভুত চাপা আতঙ্কের পরিবেশ সৃষ্টি হয়।

নকুল:(নীরবে) চল, আরেকটু এগিয়ে যাই। আমরা এখান থেকে বেরোতে পারব না, কিন্তু সতর্ক থাকতে হবে।

সহদেব সম্মতি জানায়, এবং তারা ধীরে ধীরে আবার হাঁটতে শুরু করে। 

জঙ্গলের গভীরে প্রবেশ করার সাথে সাথে তারা আরও বেশি করে অনুভব করতে থাকে যে কিছু একটা তাদের অনুসরণ করছে, কিন্তু সেটা কী বা কে তা এখনো অজানা।

তারা নিজেদের মধ্যেই অজানা সাসপেন্সে ভরে ওঠে। নকুল এবং সহদেব জানে না সামনে কী অপেক্ষা করছে, কিন্তু তারা অনুভব করছে যে জঙ্গলের রহস্য তাদের জন্য অপেক্ষা করছে। 

এই অজানা সাসপেন্সের মধ্যে দিয়ে, নকুল এবং সহদেব অজানা বিপদের সম্মুখীন হতে প্রস্তুতি নিচ্ছে। তাদের অ্যাডভেঞ্চার যেন কেবল শুরু হয়েছে, এবং এই অধ্যায়ের শেষ কিন্তু নতুন রহস্যের শুরুতে রূপান্তরিত হয়। 

এইভাবে, অধ্যায় ১ শেষ হয়, যেখানে নকুল এবং সহদেবের সামনে অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ অপেক্ষা করছে, তাদের পরবর্তী পদক্ষেপ কি হবে তা জানতে আরও এগিয়ে যেতে হবে অধ্যায় ২ -এ।

গল্পটি ভালো লাগলে আমাকে ফলো করতে ভুলবেন না ধন্যবাদ !!

Continue to next

No reviews available for this chapter.